বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি
তাজউদ্দিন আহমেদ এর বাড়ি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ এর বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে কাপাসিয়া পর্যন্ত সহজেই যাতায়াত করা যায়। কাপাসিয়ায় পৌঁছে দরদিয়া গ্রামে গেলে তাজউদ্দিন আহমেদ এর বাড়ি দেখতে পাবেন। যাওয়ার জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. ঢাকা থেকে বাসে কাপাসিয়া:
- ঢাকার যেকোনো বাস টার্মিনাল থেকে কাপাসিয়া রুটের বাসে উঠতে পারেন।
- মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কাপাসিয়া গামী বাস ছেড়ে যায়। "কাপাসিয়া" লেখা বাসে উঠতে হবে।
- বাসে প্রায় ২-৩ ঘন্টা সময় লাগবে, রাস্তার অবস্থা ও যানজটের উপর নির্ভর করে।
২. সিএনজি বা অটোরিকশা:
- কাপাসিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে দরদিয়া গ্রামে যেতে সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া করতে পারেন।
- কাপাসিয়া থেকে তাজউদ্দিন আহমদের বাড়ি প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত, যা সিএনজি বা অটোরিকশায় ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব।
৩. নিজস্ব যানবাহন:
- যদি নিজের প্রাইভেট কার বা মোটরবাইক থাকে, তাহলে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল বা ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে কাপাসিয়া হয়ে দরদিয়া গ্রামে যেতে পারেন।
- গুগল ম্যাপ ব্যবহার করলে রুট সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে।
৪. গুগল ম্যাপ:
- তাজউদ্দিন আহমেদ এর বাড়ি খুঁজতে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। "Tajuddin Ahmed's House" লিখে সার্চ করলে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে কাপাসিয়ার গ্রামের বাড়ির।
- তাজউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব প্রদান করা হয়।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
- তাজউদ্দিন আহমেদ গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন মৌলভী মুহাম্মদ ইয়াসিন খান ও মা মেহেরুন্নেসা। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
রাজনৈতিক জীবন:
- তাজউদ্দিন আহমেদ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:
- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বাঙালিদের ওপর বর্বর হামলা শুরু করে, তখন তাজউদ্দিন আহমেদ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করেন, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। তিনি মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় সামরিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায় করা হয়।
স্বাধীনতার পর:
- ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাজউদ্দিন আহমেদ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। তবে ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মতানৈক্যের কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।
হত্যাকাণ্ড:
- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সেই সময় তাজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন জাতীয় নেতা গ্রেফতার হন। ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাজউদ্দিন আহমেদসহ চারজন জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, যা "জেলহত্যা" নামে পরিচিত।
ব্যক্তিগত জীবন:
- তাজউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ছিলেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন, যিনি পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী হিসেবে কাজ করেন। তাদের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে, যাদের মধ্যে সোহেল তাজ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত তিনি কাপাসিয়া থেকে এমপি হয়েছিল।
উত্তরাধিকার:
- তাজউদ্দিন আহমেদ একজন সৎ, নীতিবান এবং নিষ্ঠাবান নেতা হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি তার সারা জীবনে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখে গেছেন এবং তার সৎ রাজনীতি এবং দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশে আজও তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। এজন্যে কাপাসিয়া মানুষ সব সময় তার জন্য গর্ববোধ করে।