মুক্তিযুদ্ধে কাপাসিয়ার ভূমিকা:
1. *কৌশলগত অবস্থান*
- কাপাসিয়া গাজীপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিল, যার সন্নিকটে শীতলক্ষ্যা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদী প্রবাহিত হয়। এই নদী অঞ্চলগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয় এবং সরে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো।
- এলাকাটি মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা কৌশল চালানোর জন্য উপযোগী ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা এখান থেকে ঢাকাসহ আশেপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতেন।
2. *তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব*
- তাজউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং কাপাসিয়ার বিশিষ্ট সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতৃত্ব দেন। তার ঐতিহাসিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
3. *মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও গেরিলা যুদ্ধ*
- কাপাসিয়ায় অনেক মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন। এখানকার যুব সমাজ মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- স্থানীয় জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার, আশ্রয় এবং তথ্য দিয়ে সহায়তা করত।
4. *জনগণের অবদান*
- কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করত এবং নিজেদের জীবন বিপন্ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করত।
- এই এলাকায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সাহসিকতার সঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
5. *মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্মৃতি*
- কাপাসিয়ার অনেক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন। তাদের আত্মত্যাগ কাপাসিয়ার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। কাপাসিয়া এলাকায় অনেক স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, যা এই শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে।
*মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অবদান*
মুক্তিযুদ্ধের পর কাপাসিয়া অঞ্চলের মানুষ দেশ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাজউদ্দিন আহমেদ এবং তার পরিবার বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে এবং কাপাসিয়ার মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
কাপাসিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কেবলমাত্র একটি কৌশলগত এলাকা নয়, বরং বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছিল।